ক্যান্সার একটি ভয়াবহ মরণব্যাধি । যা প্রকুপ দিন দিন বেড়েই চলছে । এমন কি মৃত্যুর হার অনেক বেশি । প্রাথমিক অবস্থায় আমরা ক্যান্সারের লক্ষন বুঝতে পারি না যার ফলে যখন ক্যান্সার পুরোপুরি ভাবে ধরা পড়ে তখন প্রতিরোধ করা সহজতর হয় না । ক্যান্সার মূলত অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফলে গঠিত হয় । এখন পর্যন্ত ক্যান্সারের সঠিক চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয় নি তবে বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক অগ্রগতি সাধন করেছে । যার ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা অনেকাংশে সম্ভব । এমন কি ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যাক্তি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে । সম্ভব মানবদেহে প্রায় ২০০ ধরনের ক্যান্সার হতে পারে । প্রত্যক ক্যান্সারের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে । পর্যন্ত ক্যান্সার নিয়ে অনেক বর্তমানে গবেষণা চলতেছে, আশা করা যায় আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান নিকট ভবিষ্যতে ক্যান্সারের কার্যকরী চিকিৎসা আবিষ্কার করতে সক্ষম হবে । একমাত্র সচেতনতাই ক্যান্সার থেকে আমাদেরকে অনেকাংশে রক্ষা করতে পারে । আমাদের সমাজে এখনো অব্দি ক্যান্সার নিয়ে অনেক ভুল মতবাদ রয়েছে এবং ক্যান্সার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান এর অভাব রয়েছে । যার কারণে অনেক মানুষের ভিতর সচেতনার প্রসার রয়েছে । আমরা আমাদের এই (বিডিকোষ)ব্লগ সাইটে ওকে ক্যান্সার সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরার উদ্দেশ্য এই অনলাইন তথ্য ভাণ্ডার চালু করেছি । । আপনারা আশা করি সকলের উপকৃত হবেন ।
ক্যান্সার কি?
ক্যান্সার হল অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফলে সৃষ্ট এক প্রকার টিউমার । আমাদের মানব দেহ ছোট ছোট কোষের সমন্বয়ে সংঘটিত । কোষ মারা যায় , এবং নতুন কোষের সৃষ্টি হয় । এই প্রক্ক্রিয়া নিয়মিত ও নিয়ম মাফিক হতে থাকে । যদি কোন কারনে এই কোষ বিভাজন প্রক্ক্রিয়া বাঁধা প্রাপ্ত হয় , তখন ই সৃষ্টি হয় টিউমার , যার পরবর্তী ধাপ ক্যান্সার । অর্থাৎ যখন কোষ বিভাজন স্বাভাবিক হবে না , তখনই আমাদের দেহে ক্যান্সার রোগের সৃষ্টি হয় । একে প্রাথমিকভাবে টিউমার বলে ।
ক্যান্সারের কারণ সমূহঃ
ক্যান্সার ঠিক কী কী কারণে সংঘটিত হয় তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয় । তবে সাধারণ কিছু কারণ খুজেঁ পাওয়া গেছে যা থেকে ধারণা করা হয়েছে যে এইসব কারণের জন্যই ক্যান্সার রোগের সৃষ্টি হয় । ক্যান্সার সৃষ্টির জন্যে আমাদের জীবন যাপন অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী । আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাদ্য করি যেমন ফাস্টফুড জাতীয় খাদ্য , তৈল জাতীয় খাদ্য । অনেক ক্ষেত্রে বয়স্কদের ক্যান্সার দেখা দিতে পারে । যেমন বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি বৃদ্ধি পেতে থাকে । এর কারণ মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । এক গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণ চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে শরিরের মেদ বেড়ে যায় । যার কারণে উক্ত ব্যাক্তি কর্মহীন হয়ে পড়ে । ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে । এমন কি কিছু কিছু মানুষ প্রচুর পরিমাণ নেশাজাতীয় দ্রব্য বহন করে , যা আমাদের ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য দায়ী । গ্রাম এলাকার বয়স্ক মহিলারা পান , জর্দা , তামাক পাতা গ্রহন করে । যা মুখের ক্যান্সারের জন্য সৃষ্টি করে । অনেক সময় জিনগত কারণেও ক্যান্সার দেখা দিতে পারে । সাস্থ সংস্থা (who) একটি গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা উল্লেখ করেছে জিনগত কারণে অনেক মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে । ভৌগলিক কারনেও ক্যান্সারের জন্য অনেকটা দায়ী । যাদের বাড়ি কল-কারখানা কিংবা রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাশন এলাকার আশেপাশে তাদের ক্যান্সারের প্রবণতা সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি ।
ক্যান্সারের লক্ষণঃ
১ । দীর্ঘ সময় ধরে জ্বর ও কাশি হওয়াঃ
দীর্ঘ সময় ধরে জ্বর ও কাশি অনেক কারণেই হতে পারে । অনেক সময় ঋতু পরিবর্তনের ফলে আমরা জ্বরে আক্রান্ত হই । কিন্তু অনেক সময় দেখা গেছে জ্বরের মাত্রা অনেক দিন ব্যাপী হয় । যদি এক মাস বা অধিক বেশি হয় তবে অবশ্যই আমাদের ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত । কারণ অধিক সময় জ্বর ব্লাড ক্যান্সার, এইডস, নিউমেনিয়াসহ অনেক জটিল রোগের কারন হতে পারে । তাই যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তার দেখানো উচিত ।
২। অস্বাভাবিক ভাবে রক্তপাতঃ
শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে অস্বাভাবিক ভাবে রক্তপাত হওয়া অথবা পায়খানার সাথে রক্ত বের হওয়া কোন ভালো লক্ষন নয় । যদি এই সমস্যা দেখা দেয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে । অনেক সময় প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত বাহির হলে বা কাশির সাথে রক্ত বাহির হলে অবশ্যই রক্ত পরিক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে হবে । মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন থেকে দুধ বের হওয়ার সময় রক্ত বের হতে পারে যা স্তন ক্যান্সারের লক্ষন ।
৩। খাবারে অরুচিঃ
অনেক সময় আমাদের ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও আমরা খেতে পারি না কিন্তু আমাদের ক্ষুধা অনুভব হয় । খাবার পর মাঝে মাঝে বমি আসে সেটা কি আমরা অনেকেই স্বাভাবিকভাবে মনে করি কিন্তু আসলে ব্যাপারটা সেরকম নয় । এটা হতে পারে কোন একটা জটিল রোগের উপসর্গ । তাই এই সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
৪। শরীরের বিভিন্ন স্থানে অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভবঃ
আমরা প্রত্যেকেই পারিশ্রমিক কাজ করি বা প্রত্যেকে দৈনিক কোন না কোন সাথে যুক্ত থাকি । এতে কোনো কোনো সময় শরীরে অস্বাভাবিক ভাবে ব্যথা দেখা দেয়, তবে এ ব্যথা মাথা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে ।
৫। শরিরে ছোট ছোট দানার মতো ফুসকুড়ি হওয়াঃ
শরিরে ছোট ছোট দানার মতো ফুসকুড়ি দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে কারণ এটি স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে ।
৬। ঘন ঘন পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়াঃ
অনেক সময় আমাদের খাদ্য তালিকায় কোন সমস্যা থাকার ফলে আমাদের পেটে নানা সমস্যা দেখা দেয় । কিন্তু এই পেটের সমস্যা ঘন ঘন এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই আমাদের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে । কারণ দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া এটা আমাদের ক্যান্সার অন্যতম একটি লক্ষণ ।
ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
এখন ক্যান্সারের চিকিৎসা তথা প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেক উন্নত মানের রয়েছে । এমনকি আমাদের দেশেও অনেক উন্নত চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে যার দ্বারা ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে ।
প্রধান চিকিৎসা গুলো হলঃ
১। অস্ত্রোপচার
২। রেডিওথেরাপি
৩। কেমোথেরাপি
৪। হরমোন থেরাপি
৫। সহায়ক চিকিৎসা
৬। অন্যান্য চিকিৎসা
ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এই আর্টিকেলে প্রকাশ করা হয়েছে আপনারা চাইলে নিচের লিংকে ক্লিক করে উক্ত তত্ত্ব টি দেখতে পারেন । ক্যান্সার বিষয়ে আপনাদের যে কোন পরামর্শ বা প্রশ্ন থেকে থাকে আমাদের প্রশ্ন উত্তর সেকশনে করতে পারেন । আমরা আপনাদের কে সঠিক তথ্য জানাতে চেষ্টা করব ।