ক্যান্সারের প্রধান ১২ টি কারণ , যা সকল বয়সী মানুষের জানা অত্যন্ত জরুরী ।
ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি। এটি ঘাতকব্যাধি নামে পরিচিত । এ রোগের লক্ষণগুলো অন্য রোগের লক্ষণগুলো সাথে মিল থাকায় প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সারের লক্ষণ বোঝা যায় না। যার কারণে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা যায় যায় না। ফলে ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যাক্ত অতি অল্প সময়ে মারা যায়। আবার ক্যান্সারের ১০০% কার্যকর চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি তবে প্রতিরোধ আবিষ্কৃত হয়েছে। আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞান তথা চিকিৎক বিশেষজ্ঞরা ক্যান্সারের চিকিৎসা আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে এমন কি আমাদের দেশেও ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই রোগের লক্ষণ দেখে যদি প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করা যায়, তবে সঠিক সময়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো গুলো সাধারণত অন্যান্য ছোট ছোট রোগের মত। যার কারণে আমরা অবহেলা বা অগ্রাহ্য করে থাকি। আর আমাদের এই অবহেলার কারণে ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। তারপর চিকিৎসা করেও ততটা সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আজকে আমরা ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ নিয়ে আলোচনা করবো। আমাদের আলোচিত লক্ষণগুলো কারো শরীরে দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। । ছোট ছোট ভুলের কারণে ঝড়ে যাচ্ছে অনেক অকাল প্রাণ। তাই আমাদের সময় থাকতে হবে সকলকে সাবধান।
ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ সমূহ সমূহ সমূহ:-
১। প্রস্রাবের পরির্বতন:
যদি প্রস্রাবে কোন ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায় তাহলে ধরে নিতে হবে এটি ক্যান্সারের প্রথমিক লক্ষণ। যেমন প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের গতি কমে যাওয়া। অন্ডকোষের আকারের পরিবর্তন অথবা মাংস বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা প্রসাবের বেগ থাকা সত্ত্বেও না হওয়া।
২। হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া:
হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া এটি ক্যানসারের একটি পূর্ব লক্ষণ। যখন দেখবেন যে আপনার শরীরে কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমতে শুরু করেছে তখন ভেবে নেবেন এটি ক্যান্সারের লক্ষণ। যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন । এ ধরনের লক্ষণগুলো প্রধানত পাকস্থলী ক্যান্সার বা পিত্তনালীতে ক্যান্সারের ক্যান্সারের কারণে হয়ে থাকে।
৩। মুখের অস্বাভাবিক পরিবর্তন:
মুখের ভিতরে বিভিন্ন অংশে সাদা সাদা দাগ হয়ে যাওয়া, কোন কিছু গিলতে সমস্যা, কথা বলতে সমস্যা, মুখ নাড়াতে কষ্ট পাওয়া, এবং দীর্ঘ দিন ব্যাপী না শুকানো কাশি লেগে থাকা, দাঁত নড়বড়ে হওয়া, মুখের মাড়িতে ঘা হওয়া, জিব্বার বিভিন্ন স্থানে গর্ত আকারে ঘা হওয়া হওয়া, ঠোটেঁ অসাড়তা। ইত্যাদি মুখের ক্যান্সার লক্ষণ হয়ে থাকে। তাই এই গুলো প্রকাশ পেলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৪। জ্বর:
এটি আমাদের প্রচলিত একটি রোগ। এমন কোনো মানুষকে পাওয়া যাবে না যে জীবনে কয়েকবার জ্বরে আক্রান্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে জ্বর আসলে কোন রোগ নয়, এটি অন্য আরেকটি রোগের উপসর্গ মাত্র। অনেকে শুনে অবাক হবে যে জ্বর ক্যান্সারের লক্ষণ। একজন ব্যক্তি যদি অস্বাভাবিক ভাবে বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোন কারণ ছাড়াই বারবার জ্বরে আক্রান্ত হয় তাহলে তার ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যখন ক্যান্সারের কোষগুলো শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্থানে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিস্তার লাভ করে তখনই মূলত বার বার জ্বর আসে। এমনকি ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে সবসময় জ্বর থাকে। এটি মূলত ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৫। অতিরিক্ত ক্লান্তিঃ
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কোন না কাজ করতে হয়। কাজ করার সময় আমরা ক্লান্তি বোধ করি। কিন্তু যদি কারো শরীরে কোন কারণ ছাড়াই ক্লান্তি দেখা দেয় , তাহলে তার ভাবতে হবে এটি একটি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। যখন ক্যান্সার কোষ বড় হতে থাকে তখন মূলত ক্লান্তি আসে। লিউকোমিয়ার ক্যান্সারের কারণে এমনটি হতে পারে। এছাড়া কোলন ক্যান্সার ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও এরকম ক্লান্তি আসে।
৬।স্তনের পরিবর্তন:
আমাদের দেশের যদিও পুরুষের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঘটনা কম । কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে হর-হামেশায় স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। তবে একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিবেদন থেকে প্রকাশ পেয়েছে যে যত ধরনের তন ক্যান্সার হয় তার ১ শতাংশ পুরুষের স্তনে হয়। কাজেই পুরুষদের ক্ষেত্রে অবহেলা করা যাবে না। পুরুষদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার মূলত প্রধান কারণ হল ক্যানসার হওয়ার মূলত প্রধান কারণ হল ইস্ট্রোজেন হরমোনের উচ্চমাত্রা । পুরুষের স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হলো স্তনের আকার বেড়ে যাওয়া, স্তনের বোটায় ব্যথা হওয়া।
নারীদের ক্ষেত্রে যে ধরনের লক্ষণ দেখা দেয় তা হলো টিউমারের মতো শক্ত হওয়া এবং অস্বাভাবিকভাবে ব্যথা হওয়া, স্তনের বোঁটা দিয়ে পুঁজ বের হওয়া, মারাত্মক ব্যথা করা, দুগ্ধদানকারী মায়ের দুধের সাথে রক্ত বের হওয়া এবং স্তনের আকার একটা থেকে আরেকটা ছোট বড় হওয়া।
৭।পাকস্থলীর বিভিন্ন লক্ষণসমূহ:
বিভিন্ন কারণে পাকস্থলীতে তথা পেটে ব্যথা হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসার পরও যদি ওই ব্যথা না কমে স্থায়ী হয় হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি ক্যান্সারের লক্ষণ। রক্ত বমি হওয়া এবং কাশির সাথে রক্ত বাহির হওয়া, বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে । কারণ এগুলো মূলত অগ্নাশয় ক্যান্সার ,পাকস্থলীর ক্যান্সার এমনকি লিভার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
৮।শরীরের বিভিন্ন স্থানে অস্বাভাবিক ব্যাথা :
যখন শরীরের বিভিন্ন স্থানে অস্বাভাবিক ব্যাথা দেখা দেয়। চিকিৎসার পরও না কমে তবে এটি হাড়ের ক্যান্সার ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে। চিকিৎসার পরও যদি হাড়ের ব্যথা না কমে তবে ডাক্তারের পরামর্শ করতে হবে। অনেক সময় এটি মস্তিষ্কের টিউমারের কারণও হতে পারে । এছারাও শরীরের অনেক স্থানে ব্যথা দেখা দেয় যেমন মলদ্বার, পিঠ ইত্যাদি। এগুলো মলদ্বার ক্যান্সারের কারণেও হয়ে থাকে। যখন ক্যান্সার কোষগুলো আমাদের প্রকট আকার লাভ করে তখন অতিমাত্রায় ব্যথা হয়।
৯।ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী হওয়া:
শরীরের কোন স্থানে ক্ষত দেখা দিলে এবং চিকিৎসারর পর ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি ক্যান্সারের লক্ষন হতে পারে।
১০। রক্তপাত:
শরিরের বিভিন্ন স্থান যেমন মলদ্বার, যৌন নালী দিয়ে রক্ত বের হওয়া , বমির সাথে রক্ত বের হওয়া, কাশির সাথে রক্ত যাওয়া, দুগ্ধদানকারী নারীদের ক্ষেত্রে দুধের সাথে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি ক্যান্সারের অন্তিম লক্ষণ। এই লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
১১।খাদ্য হজম না হওয়া হওয়া :
আমরা যখন খাদ্য গ্রহণ করি তখন আমাদের পরিপাক গ্রন্থি খাদ্য হজমে সহায়তা করে। যখন পরিপাকনালী তে কোন সমস্যা থাকে তখন আমাদের খাদ্য হজমে ব্যাঘাত ঘটে। এটি অনেক সময় পাকস্থলী ক্যান্সারের কারণে হয়ে থাকে।
১২। অন্যান্য কারণগুলোঃ
উপরে বর্ণিত কারণ গুলো ছাড়াও আরো অনেক কারণেও ক্যান্সার হতে পারে। কাজেই যখন আমাদের শরীরে কোন কিছু অস্বাভাবিক মনে হবে বা সাধারণ রোগ গুলো ওষুধ সেবনের পর ও না সারবে তখন আমরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হব। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর সুস্থ থাকার পরও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করা উচিৎ।