উচ্চরক্তচাপের প্রধান ১০ টি কারণ , যা সকল বয়সী মানুষের জন্য জানা একান্ত্র প্রয়োজন ।

উচ্চ রক্তচাপ এক ধরনের নীরব ঘাতক, কারণ খুব সহজে এর উপসর্গ বোঝা যায় না, কিন্তু নীরবে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিসাধন করে থাকে।

হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন করার সময় শিরা ও ধমনীর ওপরে যে পরিমাণ চাপ দিয়ে থাকে তাই হচ্ছে রক্তচাপ। কিন্তু যখন বিভিন্ন কারণে হৃৎপিণ্ডের রক্ত নালী সরু হয়ে শক্ত হয়ে যায় এবং  হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে যায় তখন রক্ত চলাচল করতে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় শক্তির বা চাপের  প্রয়োজন হয়, এটাই হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ।

হৃৎপিণ্ড এভাবে চাপ প্রয়োগ করে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত ছড়িয়ে দেয়। এই রক্ত চাপের মাধ্যমে বোঝা যায় হৃৎপিণ্ড কি পরিমাণ রক্ত সরবরাহ করছে অথবা রক্ত নালী রক্ত প্রবাহে কি পরিমাণ বাধা প্রধান করছে। রক্ত নালীর সরু বা প্রশস্তের ওপর রক্ত প্রবাহ নির্ভর করে। রক্ত নালী সরু হলে রক্ত চাপ বাড়বে কিন্তু রক্তের প্রবাহ কমবে এবং রক্ত নালী প্রসস্থ হলে রক্ত প্রবাহ বাড়বে, সঙ্গে সঙ্গে রক্ত চাপ কমবে।

রক্তচাপ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সাধারণত ব্যায়াম, হাঁটা-চলার সময় রক্তচাপ বেশি থাকে এবং ঘুমানোর সময় রক্তচাপ কম থাকে। এমনকি মানুসিক চাপেও রক্তচাপ বাড়তে পারে। তাই বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপ পরিমাপ করে তার গড় করলে রক্তচাপের সঠিক অবস্থা জানা যায়।

তৃতীয় বিশ্বের দেশেগুলোতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার দিন দিন অনেক বেড়ে চলেছে। এ সংখ্যা প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ এ দাড়িয়েছে। সম্প্রতি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে এই তথ্যই উঠে এসেছে।

হৃদরোগের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই উচ্চরক্তচাপ সরাসরিভাবে দায়ী হয়। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের এখনও পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এমন কিছু নমুনা আছে যেগুলো উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

উচ্চরক্ত চাপের প্রধান কারণ সমূহঃ

১. উচ্চ রক্তচাপের বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে  উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ে। বয়স্ক ব্যক্তি হলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে হৃদ সংকোচন সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। এক্ষেত্রে রোগীর ধমনিগুলি শক্ত হয়ে যায়।

২. পারিবারিক ভাবে ও এটা হয়ে থাকে। পরিবারের ‍যদি আগে থেকে কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তাহলে আপনার উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া উচ্চ রক্তচাপের কারণে কম বয়স থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩. পুরুষদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা অধিক মাত্রায় চোখে পড়ে। তবে এতে নারীদের নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নারীদের ক্ষেত্রেও এই রোগে আক্রন্ত  হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা রয়েছে। সুতরাং জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

৪. উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। তবে বিষয়টি বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। যাদের পেট, নিতম্ব ও উরুতে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেছে তাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এতে যেকোনো সময় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।

কিছু মানুষ আছে যারা অতিরিক্ত পরিমাণে লবন খান। এই প্রবণতা উচ্চ রক্তচাপ ‍বৃদ্ধি করে। যারা অতিরিক্ত পরিমাণে লবন খান তবে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিহত করতে অবিলম্বে এই অভ্যেস ত্যাগ করুন। কোনো খাদ্য তৈরির সময় লবনের পরিমাণ সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার সময় নুনের পরিমাণ জেনে নিতে হবে। ফাস্ট ফুডে প্রচুর পরিমাণ লবন ব্যবহার করা হয়, এ কারণে এই ধরণের খাবার খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।

আপনি যদি অতিরিক্ত অ্যালকোহলে আসক্ত হন তবে এটি বন্ধ করা উচিত। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে আসক্ত হলে আপনার এবং আপনার সুস্থ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাজেই আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন।

৭. অফিসের এবং অফিসের বাইরে বিভিন্ন কারণে আপনি যদি বেশি চাপ নিয়ে কাজ করেন, অতিরিক্ত চিন্তা করেন তবে এটি আপনার রক্তচাপকে বাড়িয়ে দিতে পারে। কাজেই চিন্তামুক্ত থাকুন। নিজকে শান্ত ও রিলাক্স রাখুন। চাকরির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্ট্রেস আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

৮. সম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জন্ম নিরোধক পিল সেবন করলে উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।

৯. অলস জীবনযাপন শুধুমাত্র আপনার শরীরে মেদ বৃদ্ধি করবে তা নয় এটি আপনাকে উচ্চ রক্তচাপের মুখোমুখি দাঁড় করাবে। যে কোনো ধরণের খেলা বা হাঁটাহাঁটির সঙ্গে যুক্ত থাকুন, শারীরিক কসরত উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি  অনেকটাই দূরে রাখে।

১০. কিছু কিছু ওষুধ আছে যেগুলো ঠাণ্ডা অথবা অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেবন করা হয়। এতে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা রয়েছে। ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

উচ্চরক্তচাপ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে  নিচের আর্টিকেল গুলো পড়ুন ।

১ । উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিজে জানুন অন্য জানান ।

২। উচ্চ রক্তচাপের (হাই প্রেসার) প্রতিকারসমূহ-নিজে জানুন, অন্যকে জানান ।

৩। উচ্চ রক্তচাপের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি । খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করুন-সুস্থ থাকুন । [BDKOSH.COM]

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.